জাতীয় সংসদ ‘সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩’ পাস করেছে, যা সাইবার নিরাপত্তা শক্তিশালীকরণ, ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ শনাক্ত, প্রতিরোধ ও দমন এবং সেই অপরাধের জন্য বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ এই বিলটি পাসের প্রস্তাব দেন, যা ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়। এর আগে, বিলটির জনমত যাচাই ও সংশোধন সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করা হয়।
এই বিলটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে প্রণীত, এবং এতে চারটি অজামিনযোগ্য ধারার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই আইনের অধীনে অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের কারাদণ্ড অথবা এক কোটি টাকা জরিমানা, বা উভয় দণ্ড। আলোচনার সময় বিরোধী দলের সদস্যরা ৪২ ধারার সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়ে করেন এবং সাংবাদিকদের গ্রেফতারের জন্য প্রেস কাউন্সিল বা অন্য কোনও সংস্থার পূর্বানুমতি নেওয়ার প্রস্তাব করেন।
অজামিনযোগ্য ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, “যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনি প্রবেশ, ক্ষতি বা বিনষ্ট করা হয়, তাহলে এটি একটি অপরাধ হবে।” এর জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি ৩ বছরের কারাদণ্ড অথবা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে, এবং গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে ৬ বছরের কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা জরিমানা হতে পারে।
অজামিনযোগ্য ১৯ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, “যদি কেউ কোনো কম্পিউটার বা নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে অথবা ক্ষতিকর সফটওয়্যার প্রবেশ করায়, তাহলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।” এই অপরাধের শাস্তি ৭ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
২১ ধারায় বলা হয়েছে, “যদি কেউ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা , জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত, বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালায়, তাহলে সেটি একটি জ্ঞাত অপরাধ হবে।” এর শাস্তি ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা জরিমানা হতে পারে।
২৭ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, “যদি কেউ রাষ্ট্রের অখণ্ডতা বিপন্ন করে, তাহলে সাইবার সন্ত্রাসের মামলা হবে এবং শাস্তি ১৪ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১ কোটি টাকা জরিমানা হতে পারে।”
এছাড়া, হ্যাকিংয়ের জন্যও ১৪ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১ কোটি টাকা জরিমানা হতে পারে।
এই বিলটি প্রণয়নের উদ্দেশ্য ও কারণ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ডিজিটাল অপরাধের কার্যকর বিচারের জন্য নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে।
বিলটি পাসের প্রক্রিয়ায় আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বিরোধী দলের সদস্যরা ছিলেন মুজিবুল হক, ফখরুল ইমাম, রুস্তম আলী ফরাজী, হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, শামীম হায়দার পাটোয়ারি, বেগম রওশন আরা মান্নান, পীর ফজলুর রহমান এবং গণফোরামের মোকাব্বির খান।